১। খান বাহাদুর আহসান উল্লাহ সরকারি কাজে নিযুক্ত থাকার সময় তিনি বিভিন্ন জেলা ও বিভাগে কাজ করেন। এসব স্থানে চাকরি করার সময় তার বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়। তিনি লক্ষ্য করেন, অবিভক্ত বাংলার শিক্ষকগণ অধিকাংশ হিন্দু হওয়ায় তারা মুসলমান ছাত্রদের পরীক্ষায় নম্বর কম দিত। ফলে মেধাবী মুসলমান ছাত্ররা প্রবেশিকা পরীক্ষায় ভালো ফল করতে না পেরে উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি অনুসন্ধান করে দেখেন পরীক্ষার খাতায় পরীক্ষার্থীর নাম থাকার কারণেই এ সমস্যা হচ্ছে। তাই তিনিই সর্বপ্রথম পরীক্ষার খাতায় পরীক্ষার্থীর নাম লেখার রীতি বিলোপ করে শুধু রোল নম্বর লেখার রীতি প্রচলন করেন। এ রীতি প্রচলিত হলে পরীক্ষকদের পক্ষপাতিত্বের সুযোগ থাকে না। তিনি মাদ্রাসার পাঠ্যসূচিও যুগোপযোগী করেন এবং মাদ্রাসা পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের উচ্চ শিক্ষার পথ উন্মুক্ত করেন। খান বাহাদুর আহসান উল্লাহ স্বীয় চেষ্টায় উচ্চশিক্ষা লাভ করেন এবং বাঙালি মুসলমান যুবকদের জন্য উচ্চশিক্ষার পথ প্রশস্ত করে যান। তিনি অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তিনি বাংলা একাডেমীর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিলেন। শিক্ষা বিস্তারে তার অসাধারণ ভূমিকার জন্য তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার তাকে খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯২৯ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে তিনি এক বিরাট কর্মযজ্ঞে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি ১৯৩৫ সালে সাতক্ষীরার নলতায় 'স্রষ্টার ইবাদত ও সৃষ্টির সেবা এই আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রতিষ্ঠা করেন আহছানিয়া মিশন। ১৯৬৪ সালে এর শাখা প্রতিষ্ঠা করেন ঢাকায়। প্রতিষ্ঠানটি আজ নিজ গুণে দেশ-বিদেশে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে। এ প্রতিষ্ঠান থেকে এখন আরও বহু সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়েছে। দিন দিন এর প্রসার ঘটছে। এদেশের আর্থ-সামাজিক ও শিক্ষা ক্ষেত্রে নীরবে অবদান রেখে চলেছে আহছানিয়া মিশন। খান বাহাদুর আহসান উল্লাহর চরিত্রে বহুগুণের সমন্বয় ঘটেছিল। তিনি একাধারে ছিলেন শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারক, সু-সাহিত্যিক, বাংলা ভাষার গভীর অনুরাগী, মানব সেবক ও ইসলামী চিন্তাবিদ। নারী জাতি ও অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি তার ছিল গভীর শ্রদ্ধাবোধ। তিনি জাগতিক কাজের পাশাপাশি ইহলৌকিক কাজেও জীবনের বহু সময় ব্যয় করেছেন। জীবনের শেষ দিকে তিনি কামেল পীর হিসেবে পরিচিত হন, তার সিদ্ধ জীবনের পরিচয় পেয়ে বহু মানুষ তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তার বহু হিন্দু ভক্তও দেখা যায়।
২। কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা গ্রামে ১৮৮৭ সালের মার্চ মাসে জন্মগ্রহন করেন। তিনি এই এলাকার একজন বিশিষ্ট সমাজসেবী ছিলেন। তার বদান্যতায় কুলিয়া নদীর ওপর লোহার ব্রীজ নির্মিত হয়্ তিনি কয়েকটি পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন। এ অঞ্চলে মুসলিম জাগরণে তার ভুমিকা অনস্বীকার্য। বৃটিশ সরকার তাকে খানবাহাদুর উপাধিতে ভুষিত করেন।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস