Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

নলতা ইউনিয়নের ইতিহাস

                ভৌগোলিক অবস্থানগত কারনে দক্ষিণাঞ্চলের সাতক্ষীরা জেলা একটি অতিমাত্রায় দূর্যোগ প্রবণ এলাকা। নদী বেষ্টিত এলাকা হিসাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে তথা কালিগঞ্জের প্রাণ কেন্দ্র থেকে ৮ কিলোমিটার অদূরে সু-পরিচিত এবং বানিজ্যিক এলাকার নাম নলতা। ইছামতি নদীর করাল গ্রাসে বিলুপ্তি ঘটেছে ব্যবসায়ীক অঙ্গন কিন্তু অতীতের দৃশ্যপট স্মৃতি এখনো সবার হৃদয় কে নাড়া দিয়ে কর্মচাঞ্চল্য হতে জাগ্রত করে। অতীত কে নয় বর্তমান প্রজন্মকে সঠিক পথে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করে এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়িয়ে দেশ ও সমাজের উন্নয়নের দুয়ার উন্মোচন করতে সদা প্রস্তূত নলতা ইউনিয়ন পরিষদ।

                   নলতা ইউনিয়ন একটি নদী বেষ্ঠিত ইউনিয়ন। এক সময়ে অত্র ইউনিয়নে অসংখ্য খাল বিল বা জান ছিল। অত্র ইউনিয়নে কামারের সংখ্যা বেশি ছিল। স্থানীয় লোকজন জান পাড় হয়ে কামারের বাড়ীতে যাতায়াত করত এবং সেইহেতু অত্র ইউপির নাম “কামারজানী“ হয়েছে বলে জানা যায়। ব্রহ্মপুত্র  নদীর তীরে গড়ে ওঠা উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী অঞ্চল হলো নলতা ইউনিয়ন । প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত নলতা ইউনিয়ন শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, খেলাধুলা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার নিজস্ব স্বকীয়তা আজও সমুজ্জ্বল। তাছাড়াও

 

ইউনিয়নের পটভূমি

নদী চর ও মানুষের মুখচ্ছবি

              চর, নদীতীর, সমুদ্রোপকূল আর পার্বত্যাঞ্চলের বাঙালিতে কি ভেদরেখা অঙ্কিত! ভৌগোলিক অবস্থান, পরিবেশ ও আবহাওয়া চরের জীবনধারাকে দিয়েছে এক স্বতন্দ্র বৈশিষ্ট্য। নদী ও নদীকূল পাশাপাশি চলতে চলতে কখন যে দু'জনায় বৈরিতা সৃষ্টি হয়_ নদী ভেঙে ফেলে কূল। ছোটখাটো দ্বীপভূমির মতো নদীকে গ্রাস করে জেগে ওঠে বিস্তীর্ণ বালুচর। পাশাপাশি বসবাস করা সমাজবদ্ধ মানুষের মধ্যেও ব্যক্তি-সম্পত্তির আদিম চেতনা ও জীবনোপকরণ সংগ্রহের অমোঘ প্রয়োজনীয়তা জন্ম দেয় মানুষে মানুষে বৈরিতা। শুরু হয় নবপললে ঢাকা নবউত্থিত চর দখলের সংগ্রাম। কখনও লাঠিয়ালের লাঠির জোরে দখল হয় এক একটি নবউত্থিত চর। ধূসর বালুচর হয়ে ওঠে সবুজ শস্যক্ষেত, গবাদিপশুর চারণভূমি। নদী আর বালুচরের মেলবন্ধনে চরের মানুষ গড়ে নতুন জীবন-সংসার।
কৃষাণ-কৃষাণীর পরিশ্রম ক্লান্ত হাতে বুনে দেওয়া ধান, পাট, গম, ভুট্টা, কুমড়া, মিষ্টি আলু, বাদাম আর হরেক কিসিমের ডালবীজ-তেলবীজ অঙ্কুরিত হয়ে গোটা চরকে ঢাকে সবুজের চাদরে। ফসলের মাঠে একপাল হাওয়া যেমন মঞ্জরিত-মুকুলিত ফসলগুলোকে দুলিয়ে দিয়ে যায়, তেমনি ফসল তোলার মৌসুম 'মারাকাটি'তে দুলে ওঠে চরবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত আশা আর জীবিকার স্বপ্ন। ঘরে তোলা ফসল, নদী থেকে জেলেদের জালে ধরা চকচকে টাটকা মাছগুলো কিংবা বিস্তীর্ণ চরের তৃণ খেয়ে বেড়ে ওঠা গবাদিপশুগুলোকে মালের নৌকায় বোঝাই করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নেওয়া হয়। তারপর পানসি, কোষা, ডিঙি কিংবা যাত্রাবাহী বড় নৌকার ভিড়ে মালের নৌকা পাড়ি দেয় দূরের নদীপথ। শহর-বন্দরে ফসল, মাছ, গবাদিপশু ভালো দামে বিকানোর পর তেল-সাবান, ঘরের টিন, মেশিনের যন্ত্রাংশ, টিউবওয়েল, সার কিংবা প্রয়োজনীয় দা-কাস্তের পাশাপাশি বউয়ের জন্য একটি শাড়ি, অপেক্ষমাণ ছেলেমেয়েদের জন্য নতুন জামা কিংবা কিছু শহুরে মুখরোচক খাবার না কিনেই যে কৃষক ফিরতি নৌকায় ওঠে, তাও নয়। এক চর থেকে আরেক চরে নদী পাড়ি দিয়ে 'সাগাই' আসে বেড়াতে, মেয়েজামাই নাইওর আসে। নিজস্ব ঐতিহ্যে, নিজস্ব রীতিতে অতিথি আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে ওঠে বাড়ির বউ-ঝিরা। হাটবাজার-মেলার দিন, জন্মদিন, বিয়ে-শাদির অনুষ্ঠান, ফসল তোলার মৌসুম-নবান্ন আরও নানা উৎসব-পার্বণে চর আর নদীর মুখচ্ছবির সঙ্গে মিশে যায় চরের ছেলে-বুড়ো, নারী-পুরুষের উৎসবমুখর মুখ। তবে এও চিরবাস্তব, চরবাসীর সবটাই সুখের ছিল না, সুখের নয়। ফি বছর বন্যা, নদীভাঙন, কখনও জলোচ্ছ্বাস-ঘূর্ণিঝড় বা খরার মতো দুর্যোগগুলো চরবাসীর জন্য কেবল নির্মম পরিণতিই বয়ে আনে না, মূল ভূখণ্ডের অধিবাসীদের চেয়ে তাদের অনেক বেশি মূল্য গুনতে হয়। যখন বন্যার পানিতে ভেসে যায় ঘরবাড়ি, ফসলের মাঠ, স্কুল-মাদ্রাসা-মসজিদ প্রাঙ্গণ, খোঁয়াড়ের হাঁস-মুরগি এমনকি বজ্রপাতে মারা পড়ে হালের গরুটি, বন্যার্তদের আশ্রয়কেন্দ্রে খাদ্য ও পানীয়র জন্য হাহাকার রব কিংবা যখন খরায় পুড়ে চৌচির হয়ে যায় ফসলের মাঠ, মানুষের জীবিকায়ন, তখন চরের জীবন দুর্বিষহ দুঃস্বপ্নের প্রতিচ্ছবি ছাড়া আর কিছু নয়। প্রকৃতি আর মানুষে বাধে যুদ্ধ। যুদ্ধে পরাস্ত, মঙ্গাক্রান্ত, সহায়-সম্বল, চালচুলোহীন, কর্মহীন মানুষ বেরিয়ে পড়ে শহর থেকে শহরে, এক জেলা থেকে আরেক জেলায়। রিকশা চালায়, কুলি-মজুরি খাটে কিংবা কারখানার শ্রমিক হয়ে ফেরে দু'মুঠো ভাতের সন্ধানে। নিজেকে বাঁচতে হবে, বউ-সন্তানকে বাঁচাতে হবে। মানুষের দুঃখকষ্টগুলো যখন স্বাভাবিকসীমার মধ্যে থাকে, তখন তার সুখের কোনো অনিষ্ট হয় না। সীমা অতিক্রান্ত হলেই জীবন-সুখের ওপর খড়্গহস্ত নেমে আসে। দুঃখকষ্টগুলোকে সীমার মধ্যে আবদ্ধ করতেই মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে সমঝোতায় আসে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত চরাঞ্চলে গৃহনির্মাণ, পশু প্রদান, ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা কিংবা জীবিকায়ন কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলো মানুষের জীবনে সুখের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে হয়তো। কিন্তু নিঃস্বতা থেকে চরবাসীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে আরও অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। লাঙল-জোয়াল কাঁধে কৃষাণ দৃপ্ত পায়ে হেঁটে যায় নবপল্ললিত ফসলের ক্ষেতে। জালবৈঠা হাতে জেলে ছুটে যায় তীরভাঙা ঢেউয়ের নদীতে নাও ভাসাতে। বিরান ভূমিতে ঘর ওঠে। খোলা হাওয়ায় নেচে ওঠে সবুজ ফসল। সে ফসলের মাঠ পেরিয়ে ছেলেমেয়েরা স্কুলে যায়। শান্ত নিবিড় নদীতে রঙিন পালের নৌকা তরতর করে বয়ে চলে দূর গন্তব্যে। মানুষ স্বপ্ন বুনতে ভালোবাসে।